নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ শীতকে সামনে রেখে দক্ষিণাঞ্চলের বৃহত্বম পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা দেশের বিভিন্ন এলাকার পর্যটকদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠলেও স্বাস্থ্য বিধি অনুসরন নিয়ে উদাশীনতা পরিস্থিতিকে আবার ঝুকির মুখে ফেলতে পাড়ে বলে শংকিত চিকিৎসা বিশেষজ্ঞগন। পটুয়াখালী জেলায় ৮ ডিসেম্বর সকাল পর্যন্ত সরকারী হিসেবেই করেনা আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৬৫০ জনের মত। মারা গেছেন প্রায় ৪০ জন। যারমধ্যে কলরপাড়াতেই অন্তত ১০ জনের মৃত্যু ঘটেছে করোনা সংক্রমনে। আর পটুয়াখালী যে কয়টি উপজেলা করোনা সংক্রমনে ঝুকিপূর্ণ, তার মধ্যে কলরপাড়া অন্যতম। আর এ উপজেলতেই দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। দক্ষিণাঞ্চলে প্রথম করেনা সনাক্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে গত ১৮ মার্চ পটুয়াখালীতেই। এরপর থেকে লক ডাউনে কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রে ও পর্যটকদের আগমন সহ সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে এখানে পর্যটন কেন্দ্রীক বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত প্রায় দু হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়েন। টানা ৪ মাস পরে গত মধ্য আগষ্টে লকডাউন শিথিল হবার পরে স্বাস্থ্য বিধি মেনে পর্যটকদের জন্য কুয়াকাটার দ্বার অবারিত হলে ধীরে ধীরে তাদের আগমনও বাড়তে থাকে। প্রাণ ফিরে পায় পর্যটন কেন্দ্রটির দুই শতাধীক হোটেল, মোটেল ও গেষ্ট হাউজ সহ পুরো এলাকার বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোও। এখানে আবাসন খাতের ওপর নির্ভরশীল প্রায় দু হাজার মানুষর জীবন জীবীকায়ও কিছুটা সাচ্ছন্দ আসে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের বানিজ্যিক কার্যক্রমও গতি পেয়েছে। সাগর সৈকতে পর্যটকদের মোটার বাইক আর ঘোড়ায় চড়িয়েও শতাধীক মানুষের জীবন জীবিকা নির্ভরশীল। সৈকতে ছাতা, চেয়ার ও বেঞ্চ দিয়েও আরো কিছুর পরিবারের ভরন পোষন হচ্ছে। এমনকি পর্যটকদের গ্রুপ ছবি তুলেও জীবিকা নির্বাহ করছে অনেক যুবক। টুরিষ্ট গাইড হিসেবেও কাজ করছেন অনেকে।
করেনার প্রথম ঢেউ-এর সময় কুয়াকাটার পর্যটন নির্ভর জীবিকায় চরম বিপর্যয় নেমে আসে। সেসময় এখানের পর্যটন কেন্দ্রীক মানুষগুলো পুরো পরিবার নিয়ে অনেকটা পথে বসে পড়েছিলেন। চরম অর্থ কষ্ট থেকে অন্ন কষ্টেরও সম্মুখিন হন পর্যটন কেন্দ্রীক বেশীরভাগ শ্রমজীবি। সে পরিস্থিতির কিছুটা উত্তরন ঘটলেও কিছুদিন ধরে আগত পর্যটক সহ স্থানীয়রা যেভাবে স্বাস্থ্য বিধি উপেক্ষা করে অবাধে চলাফেরা করছেন, তা নিয়ে শংকিত স্বাস্থ্য বিভাগও। বিষয়টি নিয়ে পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন-এর সাথে টেলিফোনে আলাপ করা হলে তিনি জানান, আমরা সব সময়ই সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা সহ মাস্ক পড়ার ওপর গুরুত্বারোপ করলেও তা অনেকেই মানতে চাচ্ছেন না। এমনকি জেলা প্রশাসনও বিষয়টি নিয়ে তৎপড় রয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, কুয়াকাটা বাজার সহ সাগর সৈকতে মাইকিং করছে প্রশাসন। টুরিষ্ট পুলিশও বিষয়টি নিয়ে তৎপর রয়েছে বলে জানান তিনি।
কুয়াকাটা পর্যটন মোটেল-এর ব্যবস্থাপক জানান, করোনা সংকট শুরুর পরে যে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছিল তা কিছুটা কাটতে শুরুর করলেও অনেকেই স্বাস্থ্য বিধি মানতে চান না। তবে পর্যটন করপোরেশনের কোন স্থাপনায় মাস্ক ছাড়া কাউকে প্রবেস করতে দেয়া হচ্ছে না বলেও জানান তিনি। এব্যাপারে টুরিষ্ট পুলিশের কুয়াকাটা জোনের এএসপি সোহরাব হোসাইন জানান, আমরা প্রতিনিয়ত পযটকদের সতর্ক করছি। মাইকিং ছাড়াও পর্যটকদের কাছে গিয়ে মাস্ক পড়া ও সামাজিক দুরত্ব বজার রাখারও অনুরোধ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। তবে এরপরেও ‘দুর দুরান্ত থেকে সাগর পাড়ে ভ্রমনে এসে এত নিয়ম শংখলা মানতে ভাল লাগছে না’ বলে মন্তব্য করেন অনেক পর্যটক। যা শুধু তাদের জীবনকেই নয়, পুরো এলাকাবাশীরও স্বাস্থ্য ঝুকি বৃদ্ধি করছে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় কয়েকজন চিকিৎসকও।
Leave a Reply